সুনামগঞ্জে বিএডিসির মালামাল চুরি, চাকুরি হারালেন মুক্তিযোদ্ধা কন্যা
- আপডেট সময় : ০৩:২৯:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩
- / 136
সুনামগঞ্জে বিএডিসির কর্তৃপক্ষ দ্বারা ৫০/৬০ লাখ টাকার পুরানো যন্ত্রাংশ (মালামাল) চুরি করে বিক্রির প্রতিবাদ করে চাকুরি হারালেন বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যা হাসনা বেগমকে পূনরায় স্বপদে পূননিয়োগ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ ।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের হাজীপাড়া এলাকায় জেলা বিএডিসি অফিসের পুরাতন যন্ত্রপাতি বিএডিসি কর্মকর্তা ও কর্মচারী কালোবাজারে বিক্রয় করে সরকারের ৫০/৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার ঘটনাটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারী দেখে ফেলেন এবং এর প্রতিবাদ করলে তিনি চাকুরীচ্যুত্ত হন।
এ ঘটনায় গত ৮ আগষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যা হাসনা বেগম নিজে বাদি হয়ে বিএডিসির জেলা অফিসের সহকারী প্রকৌশলী হোসনে আর রাফি,উপ সহকারী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ,দারোয়ান আল আমিন,অবসরপ্রাপ্ত ওয়েলডার তোফায়েল আহমদ ও মাহমদা বেগমকে অভিযুক্ত করে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে তিনি এ অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়,গত ২৭/০৯/২০২২ইং তারিখে ৪৫৬ নং স্মারকে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ সুনামগঞ্জ বিএডিসি যাবতীয় পুরাতন যন্ত্রপাতি নিলামে বিক্রির নির্দেশ দিলেও সুনামগঞ্জ বিএডিসি কর্মকতা পুরাতন যাবতীয় সকল যন্রপাতি নিলাম না দিয়ে আংশিক পুরাতন যন্ত্রপাতি ২২/১২/২০২২ইং তারিখে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানকে নিলাম বিক্রয় করে দেখান এবং ঐ বিক্রির টাকাগুলো সরকারের রাষ্ট্রের কোষাগাওে জমা দেন। নিলালে বিক্রির একসপ্তাহ পরে বিএডিসির হাজীপাড়াস্থ অফিস গডাউনে থাকা অবশিষ্ট ৫০/৬০ লাখ টাকার পূরাতন সকল যন্ত্রপাতি সুনামগঞ্জ শহরের ওয়েজখালীস্থ বিসিক শিল্পনগরীর ভিতরে গোপন স্থানে নিয়ে বিএডিসি সহকারী প্রকৌশলী হোসনে আর রাফি ও উপসহকারী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ গং ঐ দুইজন দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা একে অপরের যোগসাজশে কালো বাজারেব ঐ সমস্ত পুরাতন যন্ত্রপাতিগুলো বিক্রি কওে সম্পূর্ণ টাকার নিজের পকেটস্থ করেন। তারা ঐ মালামালগুলো বিক্রির আগে তাদেও উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে বিএডিসি অফিস প্রাঙ্গণে ও গোডাউনে থাকা অবশিষ্ট প্রায় ১০ হাজার ফিট পুরাতন তামার তার,পুরাতন লঞ্চের ইঞ্জিন, ,রাষ্ট্রন ও কবোতা ইঞ্জিন,ডয়েল ইঞ্জিন,পাইপ,পাম্প,জানালা গ্রীল ইত্যাদি বিক্রয় করে প্রাপ্ত টাকা সরকারী কোষাগারে জমা না দিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা নিজেরাই পকেটস্থ করেন।
চোরাইকৃত মালামাল পাচারও বিক্রয়কালে সাবেক গার্ড তেঘরিয়া নিবাসী জয়নাল আবেদীন ও মুক্তিযোদ্ধার জামাতা হাসান তালুকদারসহ স্থানীয় লোকজন দেখতে পান বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। তারা অভিযোগের করেন চুরি করে বিক্রিকৃত মালামালগুলোর বিষয়টি তদন্ত হলে সুনামগঞ্জ বিএডিসির কর্মকর্তা কর্মজারীদের এ অপরাধ প্রমাণিত হবে তারা দাবী করেন।
এ ব্যাপারে অভিযোগকারী মুক্তিযোদ্ধার কন্যা হাসনা বেগম বলেন,আমি অফিসের ঝাড়ুদার হিসেবে অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীগন কর্তৃক সরকারী অফিসের মালামাল প্রকাশ্য দিবালোকে চুরি করে অন্যত্রে গোপনে সরিয়ে বিক্রয় করাসহ তাদের এহেন অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করি এবং চুরির ঘটনার কথা সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের মাননীয় সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরুল হুদা মুকুটসহ এলাকাবাসীকে জানালে সহকারী প্রকৌশলী হোসনে আর রাফি,উপ সহকারী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ ও দাড়োয়ান আল আমিনগং একে অপরের যোগসাজশে আমাকে চাকুরী থেকে মৌখিকভাবে অব্যাহতি দিয়ে তাদের চুরির ঘটনা ধামাচাপা দিতে তৎপর রয়েছে।
এ ব্যাপারে ব্যাপারে সুনামগঞ্জ বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী হোসনে আর রাফির মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন । তবে অঅভিযোগকারী চাকুরীচ্যুত্ত হাসনা বেগম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যা। তবে অফিসের কাজে ফাকি দেওয়ার কারণে তাকে চাকুরীচ্যুত্ত করা হলে ও তাকে পরবর্তীতে স্বপদে পূনবহাল করা হয়েছে।
জানা যায়,গত ৩০/০৬/২০০৯ইং তারিখে ২৯৪ নং স্মারকাদেশ মোতাবেক বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) সুনামগঞ্জ জোনের সাবেক সহকারী প্রকৌশলী (সওকা/ভূপাউব্যপ্র) প্রনজিৎ কুমার দেব, দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে অফিসের ঝাড়–দার পদে বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যা হাসনা বেগম কে নিয়োগ দেন। দীর্ঘ ১৩টি বছর ধরে অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর দিন কাটানোর মধ্যে দিয়ে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চুরির ঘটনার প্রতিবাদ করে চাকুরী হারান মুক্তিযোদ্ধার কন্যা।
এ ব্যাপারে বিএডিসির সুনামগঞ্জ জেলা অফিসের সহকারী প্রকৌশলী হোসনে আর রাফি,উপ সহকারী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ গোডাউনের মালামাল চুরি করে অন্যত্র বিক্রি করার বিষয়টি অস্বীকার করে ফোনের লাইন কেটে দেন।
এ ব্যাপারে অভিযোগের ব্যাপারে বিএডিসির সিলেট ও সুনামগঞ্জ জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু আহমেদ মাহমুদুল হাসান বলেন,যেহেতু আমার অধীনস্থ কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে একটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে সেহেতু অভিযোগটি পেলে এ ব্যাপারে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো। তিনি বলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যাকে চাকরীচ্যুতির ঘটনাটি অমানবিক। এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। তবে মুক্তিযোদ্ধার কন্যা আমার কাছে আবেদন করলে আমি ঐ বিষয়টিও ফায়সালা করবো।